নতুন রাজধানী তৈরির ঘোষণা !

নতুন রাজধানী তৈরির ঘোষণা !

বহু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইতিহাসের এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। বিদায় নিচ্ছে পারস্য সভ্যতার শেকড়ে গাঁথা ঐতিহ্যবাহী রাজধানী তেহরান। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের নতুন রাজধানী গড়ে তোলা হবে দক্ষিণাঞ্চলের পারস্য উপসাগর উপকূলে, যেখানে সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বেশি।

ইরানের প্রশাসনিক কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার এই সিদ্ধান্তকে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেছেন “বিকল্প নয়, বরং বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ।” দীর্ঘদিন ধরে চলমান পানি সংকট, অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভূমিধসের আশঙ্কাই তেহরান ত্যাগের মূল কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন।

রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজধানী তেহরানের মাত্র এক কোটি বাসিন্দা ভোগ করছে দেশের মোট পানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ। অথচ বৃষ্টিপাত কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি, শুকিয়ে যাচ্ছে বাঁধ ও কূপগুলো। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে ২০২৫ সালে রাজধানীর পানি সরবরাহে সরকারকে প্রতি ঘনমিটার পানির জন্য প্রায় চার ইউরো পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।

তেহরান থেকে প্রশাসনিক কেন্দ্র সরানোর এই পরিকল্পনা নতুন নয়। ২০১৬ সালেই ইরানের সংসদ এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল, তবে ব্যয় ও রাজনৈতিক বাধার কারণে বাস্তবায়ন থেমে যায়। এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং আরও কয়েকজন নেতা কোম ও ইসফাহান শহরকে বিকল্প রাজধানী হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।

অবশেষে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান এই স্থানান্তরকে অনিবার্য ঘোষণা করে বলেন, “তেহরান, কারাজ ও কাজভিন অঞ্চলে পানি সংকট এত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে আর দেরি করা সম্ভব নয়।” তিনি জানান, এই প্রস্তাব আগেই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল, যদিও সে সময় সমালোচনার মুখে পড়ে তা স্থগিত ছিল।

এখন ইরানের লক্ষ্য — নতুন এক পরিকল্পিত, আধুনিক ও টেকসই রাজধানী গড়া, যা শুধু প্রশাসনিক কেন্দ্রই নয়, বরং দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক যোগাযোগের নতুন দুয়ার খুলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *